Health Tips

বসের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক বাড়িয়ে দিতে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি

0

 

বসের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক বাড়িয়ে দিতে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি

এমন কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যা হয়তো অনেকেই শোনেননি, ফলে কখনো গুরুত্বও দেননি, কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে হৃদরোগের

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,এমন কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যা হয়তো অনেকেই শোনেননি, ফলে কখনো গুরুত্বও দেননি, কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে হৃদরোগের

সবাই জানেন তামাক, স্থূলতা বা ব্যায়ামের অভাবের কারণে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়

কিন্তু এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে এমন আরো কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যা হয়তো অনেকেই শোনেননি ফলে কখনো গুরুত্বও দেননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে মানুষজনের মৃত্যুর অন্যতম শীর্ষ কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া।

এই রোগের জন্য দায়ী কিছু লুকিয়ে থাকা কারণ এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে:

১. দাঁতের ফাঁকাগুলো পরিষ্কার না রাখা

আমাদের হৃদয় এবং দাঁতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,আমাদের হৃদয় এবং দাঁতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ

আমরা যতটা ভাবি, তার চেয়ে আমাদের হৃদয় এবং দাঁতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি কম যত্নবান লোকজনের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি রয়েছে।

রক্তপাত বা ক্ষত রয়েছে এমন মাড়ি থেকে মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করতে পারে। সেগুলো রক্তনালী বা ধমনিতে চর্বির স্তর তৈরিতে সহায়তা করে।

এগুলো লিভারে গিয়ে উচ্চ মানের প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করতে পারে, যা রক্তের নালীতে স্তর বা বাধা তৈরিতে সহায়তা করে।

ফলে এরকম বাধা তৈরি হলে তা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া বা স্ট্রোক পর্যন্ত গড়াতে পারে।

কিন্তু সমাধান? নিয়মিত ভাবে দাঁত পরিষ্কার করা, বিশেষ করে ফ্লস করা এবং নিয়মিতভাবে দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা।

২. বসের প্রতি বিদ্বেষ

আপনার বসের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ আপনার হৃদরোগের কারণ হতে পারে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,আপনার বসের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ আপনার হৃদরোগের কারণ হতে পারে

এটা আসলে কোন রসিকতা নয়- আপনার বসের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ আপনার হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

১০ বছর ধরে চালানো সুইডিশ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কর্মক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক কর্মীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ওই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

''কর্মক্ষেত্রে বেশ কিছু চাপের কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যেতে পারে'' বলছেন ভিজয় কুমার, যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ হার্ট ইন্সটিটিউটের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

এর সঙ্গে যদি ঘুমের স্বল্পতা আর খারাপ খাদ্যাভ্যাস যোগ হয়, তাহলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

৩. দুঃখজনক ঘটনা

পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যুর মতো হঠাৎ করে পাওয়া কোন দুঃখজনক ঘটনা সত্যিকার অর্থেই আপনার হৃদয় ভেঙ্গে দিতে পারে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যুর মতো হঠাৎ করে পাওয়া কোন দুঃখজনক ঘটনা সত্যিকার অর্থেই আপনার হৃদয় ভেঙ্গে দিতে পারে

পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যুর মতো হঠাৎ করে পাওয়া কোন দুঃখজনক ঘটনা সত্যিকার অর্থেই আপনার হৃদয় ভেঙ্গে দিতে পারে।

আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, যে নারীরা তাদের জীবনে কোন বড় শোকাতুর ঘটনার মুখোমুখি হননি,তাদের তুলনায় যারা এরকম তিনটি বা তার বেশি দুঃখজনক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের রক্তের নালীগুলো কর্মক্ষমতা অনেক কম।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকি ইওবানি বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপে কারণে লক্ষণীয় মাত্রায় অ্যাড্রিনাল থেকে নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। যা হৃৎপিণ্ডে কম্পন অনেক বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তের চাপ বেড়ে যায়।

৪. একাকীত্ব বোধ করা

হৃদরোগের অন্যতম কারণ একাকীত্ব

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,হৃদরোগের অন্যতম কারণ একাকীত্ব

আরেকটি ব্রিটিশ জার্নাল বলছে যে, সামাজিকভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের যেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৩২ শতাংশ, সেখানে যারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন, তাদের সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ শতাংশ।

এর হয়তো একটি কারণ হতে পারে একাকীত্বের কারণে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং একাকী লোকজনকে কেউ আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে না।

২০১৪ সালে প্রকাশিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় আট বছর ধরে সাত লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করেছে। তারা দেখতে পেয়েছে যে নারীরা একা থাকেন,তাদের তুলনায় যারা সঙ্গীর সঙ্গে থাকেন, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ কম।

৫. বিষণ্ণতা

যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ৩৩ শতাংশই বিষণ্ণতায় ভুগেছেন

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ৩৩ শতাংশই বিষণ্ণতায় ভুগেছেন

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ৩৩ শতাংশই বিষণ্ণতায় ভুগেছেন।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, মানসিক সমস্যা আছে, এমন রোগীরা তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে অতিরিক্ত জটিলতায় ভোগেন।

নিউইয়র্কের জন এইচ টিইচ সেন্টার ফর উইমেন হেলথের চিকিৎসা পরিচালক নিয়েকা গোল্ডবার্গ বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বা মদ্যপান নিয়ন্ত্রিত করার মতো অভ্যাস বিষণ্ণতা মোকাবেলায় ভালো কাজ দিয়েছে।

''খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা মানুষজন এমন সব বিষয়ের দ্বারস্থ হয়, যা তাদের খানিকটা স্বস্তি দেয়। তখন তারা ভাবে না এটা স্বাস্থ্যকর নাকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।'' তিনি ব্যাখ্যা করেন।

৬. রজোবন্ধ (ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া)

যখন বয়সের কারণে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, সেসব সময় নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,যখন বয়সের কারণে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, সেসব সময় নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়

যখন বয়সের কারণে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, সেসব সময় নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এর কারণ হয়তো হতে পারে যে, এ সময় তাদের শরীরে প্রাকৃতিক ইস্ট্রজেন হরমোন নিঃসরণ কমে যা

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ধমনির অভ্যন্তরীণ দেয়ালের জন্য ইস্ট্রজেন ইতিবাচকভাবে কাজ করে, যা রক্তনালীগুলোকে নমনীয় করে রাখে।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকি ইওবানি আরো যোগ করেন যে, বয়সের কারণে রক্তনালীগুলোর নমনীয়তা চলে যায়, যা ধমনির ভেতর চাপ বাড়িয়ে দেয়।

তবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শরীর চর্চা এসব ঠেকাতে অনেকটাই সহায়তা করতে পারে।

0 comments:

Post a Comment