Health Tips

চা নিয়ে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য যা হয়তো আপনার জানা নেই

0

 

চা নিয়ে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য যা হয়তো আপনার জানা নেই

চীনা মাটির পাত্রে এক কাপ চা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,অনেক মানুষের কাছে চা পানের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

চা সম্পর্কে এমন অনেক চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে যা হয়তো সবচেয়ে বেশি চায়ে আসক্ত ব্যক্তিটিও জানেনা। আজকে আপনার হাতে ধূমায়িত এক কাপ চায়ের পেছনে রয়েছে উটের কাফেলা, পারলৌকিক প্রয়োজন এবং বিপ্লব-এর চমকপ্রদ ইতিহাস।

সারাদিন আপনার পান করা পানীয়র মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কি কি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো যে কয়েটি পানীয়র নাম বলবেন তার মধ্যে অন্যতম -চা।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়র একটি এই চা।

আমাদের চাহিদার কারণে গত তিন শতাব্দীতে এর পাতার ধরণে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন মহাদেশজুড়ে, কিন্তু এর আবেদন একই রয়ে গেছে।। উটের কাফেলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিপ্লব - এবং এমনকি পারলৌকিক জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে - চা মানবজাতির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

কিন্তু চায়ের সম্পর্কে ১০টি মজার তথ্য হয়তো অনেকেরই জানা নেই, এমনকি চায়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি আসক্ত ব্যক্তিটিরও।

চীনে হ্যান ইয়াং লিং এর সমাধিতে চা এবং টেরাকোটার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,চীনে হ্যান ইয়াং লিং এর সমাধিতে চা এবং টেরাকোটার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

১. চা পানের শুরু চীনে ২০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে

মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে প্রাচীনকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যেসব নৈবেদ্য দেয়া হতো তার মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেখা যেতো। এইসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা যা কিনা মৃতদের সাথে দিয়ে দেয়া হতো তাদের পারলৌকিক জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে। দুশো বছর আগে এভাবে চায়ের ব্যবহার হওয়ার সময়কালের কথা জানা যায়।

২. সব চা আসে এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে

যত ধরনের চা আছে সবই তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস থেকে। এই চির-হরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ থেকে পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলো উদ্ভিদের চাষের ধরণ, পরিস্থিতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াতে ভিন্নতা রয়েছে।

মালয়েশিয়ার ক্যামেরন হাইল্যান্ডস চা উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ জায়গা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,মালয়েশিয়ার ক্যামেরন হাইল্যান্ডস চা উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ জায়গা

৩. ধর্মীয় অভিজ্ঞতা

জাপানে, চা আসে চীন থেকে ফিরে আসা জাপানি ধর্মগুরু এবং দূতদের হাত ধরে। সেটা ষষ্ঠ শতকের দিকে এবং দ্রুত তা ধর্মীয় শ্রেণীর মানুষদের পছন্দের পানীয় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

আর গরম পানির সংস্পর্শে এসে হালকা সবুজ রং ধারণকারী গ্রিন টি, কয়েক শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিবান এবং উচ্চবিত্ত সমাজের মানুষদের কাছে প্রাধান্য পেয়ে আসছে।

পনেরো শতকে চায়ের সংস্কৃতির সাথে বৌদ্ধ ধর্ম-ভিক্ষুরা পরিচিত হয় চীন থেকে। কিন্তু জাপানিরা একে তাদের নিজস্ব রীতি-প্রথায় রূপ দেয়, যা একটি প্রায়-ধর্মীয় সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়।

একজন নারী জাপানের চা উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,জাপানের টি সেরেমনি বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত

৪. রাশান ক্যারাভান চা

রুশদের কাছে বেশিরভাগ চা পৌঁছাতো চীন থেকে রাশিয়ার পথে ক্যারাভান রুটে। উটের কাফেলা মাসের পর মাস ধরে ভ্রমণ করে মহাদেশ জুড়ে চা বহন করে চলতো।

তাদের রাতের ক্যাম্প-ফায়ারের ধোঁয়া চায়ের ওপর পড়তো এবং যতক্ষণে তারা মস্কো কিংবা সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছাতো পাতাগুলোতে ধোঁয়াটে স্বাদ তৈরি হতো আর সেখান থেকে তৈরি হওয়া সেই চায়ের স্বাদ যা আজকের দিনে রাশান ক্যারাভান চা হিসেবে পরিচিত।

৫. চীনা একচেটিয়া বাজারে ভাঙ্গন

সপ্তদশ শতকে চীন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরলে ব্রিটিশদের চায়ের জন্য অন্য দেশের দিকে মনোযোগ দিতে হয়।

এশিয়ায় চায়ের ক্যারাভানের পোস্টকার্ড

ছবির উৎস,PRINT COLLECTOR

ছবির ক্যাপশান,চা নিয়ে ঊটের ক্যারাভান ১৯ শতকেও এশিয়া পাড়ি দিয়েছে এবং এখন কিভাবে রাশিয়ান ক্যারাভান সেই নাম ধারণ করেছে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যেটি বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো তারা একজন স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী রবার্ট ফরচুনকে নিয়োগ করলো যিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ এবং সেগুলো অভিজাতদের কাছে বিক্রির জন্য পরিচিত ছিলেন।

তাকে দায়িত্ব দেয়া হল গোপনে চীনে যাওয়ার জন্য এবং সেখান থেকে ভারতে চা গাছ পাচারের জন্য - উদ্দেশ্য সেখানে বিকল্প একটি চা শিল্প গড়ে তোলা।

আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি ২০,০০০ চা গাছ ও চারাগাছ চীন থেকে দার্জিলিং-এ রপ্তানি করেন।

তর্ক-সাপেক্ষে অনেকেই মনে করেন, রবার্ট ফরচুনের এই গোপন কর্মকাণ্ডের ফলাফলের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে ভারতকে চায়ের আবাসস্থল হিসেবে পরিণত করেছে।

৬. দুধ চা?

ভারতে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো চায়ের উদ্ভিদটি ছিল ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অসমিকা নামে একটি উপ-প্রজাতির উদ্ভিদ। গ্রিন টি'র চেয়ে আসাম টি বেশি স্বাদযুক্ত কালো রং-এর ছিল ।

এক কাপ জেসমিন চা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,আপনি কি দুধ চা পছন্দ করেন?

সাধারণভাবে প্রাথমিক ইংলিশ ব্রেকফাস্টের অন্তর্ভুক্ত আসাম চা-এর রং কড়া থাকায় তা লোকজনকে দুধ সহকারে পান করতে প্ররোচিত করেছিল।

বর্তমানে ব্রিটেনে সাধারণ ইংলিশ ব্রেকফাস্ট বা প্রাত:রাশের সাথে দেয়া চা দুধ সহকারে পান করা হয়। কিন্তু ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য স্থানে চায়ের সাথে দুধ খুব কমই পরিবেশন করা হয়।

তার কারণ মূলত, ইন্দোনেশিয়ার জাভা থেকে নেদারল্যান্ডসে চা যেতো - যা ছিল অনেক হালকা এবং তার সাথে দুধ যোগ করার প্রয়োজন হতো না-আর সে বিষয়টি ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানিতে এই চা জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

কাঠের চামচে চা পাতা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,অনেকেই তাদের টোস্টের মধ্যে চা পাতা দিয়ে খেতেন

৭. অথবা টোস্টের সাথে চা?

যখন ১৬৫৭ সালে লন্ডনে টমাস গ্যারাওয়ে নামে এক লোকের দ্বারা প্রথম খুচরা-ভাবে চা বিক্রি শুরু হয়, এটা কিছুটা দ্বিধা তৈরি করেছিল যে সবচেয়ে ভালো উপায়ে তা গ্রহণ করার পদ্ধতি কী?

এটা ছিল তখন একটি বিলাসিতার পণ্য, সবার পক্ষে এর ব্যয় বহন সম্ভব ছিল না এবং প্রচণ্ডভাবে তা সকলের কাম্য হয়ে ওঠে এবং তা কৌলীন্যের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে। কিন্তু এটার ব্যবহার সকলের জানা ছিলনা।

কোন কোন সূত্রে দেখা গেছে যে, লোকজন পাতা ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এবং সেগুলো খাচ্ছে, এমনকি সেগুলো টোস্টের ওপর দিয়ে মাখন মাখিয়ে দিয়ে খেতেও দেখা গেছে।

৮. কফিকে ছাড়িয়ে চায়ের জয়জয়কার

ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্ক বিশ্বের বৃহৎ চা বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের রিয অঞ্চলের উর্বর ভূমি থেকে অধিকাংশ টার্কিশ ব্ল্যাক টি আসে। তুর্কী কফিও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত, তবে তুরস্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হল চা।

তুর্কী কপার চায়ের পাত্র, ক্যাফেতে কেটলিতে ঐতিহ্যবাহী তুর্কী চা পান

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,তুরস্কে কফিকে টেক্কা দিয়ে জায়গা করে নেয় চা

৯. বিপ্লব উশকে দেয়া

সতেরশো তেয়াত্তর সালে, আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল।

১৭৭৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের ঘটনার ইলাস্ট্রেশন

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,ব্রিটিশ মুল্যবান চা বহনকারী কার্গোতে অভিযান চালায় বিক্ষোভকারী বস্টন প্যাট্রিয়টরা

এভাবে 'বোস্টন টি পার্টি'র উত্থান যারা ব্রিটিশ সরকারের আরোপ করা চা করের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছিল। রাতের অন্ধকারে বোস্টন বন্দরে তিনটি ব্রিটিশ জাহাজে অভিযান চালিয়ে দেশপ্রেমিক আন্দোলনকারীরা ৩৪২ কন্টেইনার চা পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন।

এই বিক্ষোভ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলনকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

Large group of tea choices

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বেছে নিন...জোরে শব্দ করে চা পান হয়তো এর স্বাদ গন্ধ দ্রুত পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভাল উপায় হতে পারে।

১০. আপনি যে চা খাচ্ছেন তার সম্পর্কে জানেন?

এবং, চূড়ান্তভাবে, যখন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চায়ের স্বাদ উপভোগ করবেন, তখন আপনাকে এর সুঘ্রাণ, ফ্লেভার এবং চেহারার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

দৃশ্যত, জোরে শব্দ করে চা পান হয়তো এর স্বাদ গন্ধ দ্রুত পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভাল উপায় হতে পারে।

0 comments:

Post a Comment